স্বদেশ ডেস্ক:
ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগর বন্দর অবরুদ্ধ। দেশটির বিপুল পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী রপ্তানিতে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ১৫ সপ্তাহের যুদ্ধে ইউক্রেন উপকূলের বিস্তীর্ণ অংশ দখল করেছে রাশিয়া। তাদের যুদ্ধজাহাজগুলো আজভ ও কৃষ্ণসাগরে আধিপত্য বিস্তার করছে। যুদ্ধের কারণে মাঠে যেতে পারছেন না কৃষকরা। উৎপাদন বন্ধ। থমকে গেছে আমদানিও। ফলে অভাবনীয় হারে বেড়ে গেছে খাদ্যমূল্য। সোমবার ইউক্রেনের কৃষি উপমন্ত্রী দাবি করেছেন, দেশটির আবাদি জমির ২৫ শতাংশই রাশিয়ার দখলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধ এবং কৌশলগত যুদ্ধে কার্যত ইউক্রেনে ‘সোমালিয়ার দুর্ভিক্ষ’ আনছে রাশিয়া। এপি।
সাম্প্রতিক এক টেলিভিশন ভাষণে ঠিক এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি । বলেছেন, ‘রুশ অবরোধের ফলে অনাহারের কবলে পড়তে পারে ইউক্রেনের লাখ লাখ মানুষ। বিশ্ববাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও, এমনকি বিশ্ব খাদ্যসংকটের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আমরা ইউক্রেনের বিপুল পরিমাণ গম, ভুট্টা, তেল এবং অন্যান্য পণ্য রপ্তানি করতে অক্ষম।’
বর্তমান অবস্থা : ইউক্রেনের মতে, রাশিয়া আরেকটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর ওডেসা দখল করতে আরো সৈন্য মোতায়েন করেছে। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্প কেন্দ্র দনবাসের লুহানস্ক এলাকার গভর্নরের মতে, ইউক্রেনের সৈন্যরা রুশ বাহিনীকে উপসাগরে আটকে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। ভলোদিমির জেলেনস্কির মতে, রাশিয়ান বাহিনী এখন দেশের ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। রাশিয়ার সৈন্যরা কেবল ইউক্রেনকে ভূমিতেই চাপে ফেলছে না- সমুদ্রেও প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দিচ্ছে। ইউরোপের ‘রুটির ঝুড়ি’ রুশ অবরোধের দরুন নিজেরাই খাদ্যসংকটে পতিত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
পরিস্থিতি কতটা গুরুতর : ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলোতে রাশিয়ার অবরোধ দেশটির ওপর প্রচণ্ড অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে। দেশটি গম, সূর্যমুখী তেল এবং বার্লি বীজের মতো বৈশ্বিক কৃষি সরবরাহের একটি উল্লেখযোগ্য সরবরাহকারী। সে কারণে পশ্চিম ইউরোপেও এর প্রভাব স্পষ্ট হয়েছে। ইউক্রেনের ২২ মিলিয়ন টন রপ্তানি করতে না পারায় খাদ্যের দাম বেড়েছে ব্যাপক হারে। খাদ্যমূল্যের অভাবনীয় বৃদ্ধি জার্মানি এবং ফ্রান্সের মতো দেশগুলোতে রাজনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি করেছে। সংঘাতের আগে, রাশিয়া এবং ইউক্রেন বিশ্বের সূর্যমুখী তেলের ৫৫ শতাংশ সরবরাহ করেছিল। রাশিয়া এবং বেলারুশ বিশ্বের সরবরাহের ৪০ শতাংশ পটাশ সার রপ্তানি করেছিল। তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে সেই রপ্তানিও বন্ধ। এত বেশি বাণিজ্য বন্ধের ফলে জাতিসংঘ বলেছে, বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে প্রধান প্রধান খাদ্যদ্রব্যের দাম ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
সোমালিয়া, লেবানন ও ইউক্রেন : বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকাজুড়ে দারিদ্র্য এবং খাদ্য ঘাটতি প্রায় স্থায়ী এক সমস্যা। ইউক্রেনের যুদ্ধ সেই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। সোমালিয়ায় দুর্ভিক্ষ এখন প্রায় নিশ্চিত। এর আগে দফায় দফায় দুর্ভিক্ষে দেশটিতে প্রাণ হারিয়েছেন আনুমানিক ছয় লাখ মানুষ। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে লেবাননও খাদ্য সংকটে জর্জরিত। এর আগে লেবাননেও দুর্ভিক্ষে মারা গেছেন প্রায় দুই লাখ মানুষ। ইউক্রেনের মোট জনসংখ্যা সোমালিয়ার প্রায় তিনগুণ। সে হিসাবে ইউক্রেনে দুর্ভিক্ষ হলে মৃতের সংখ্যাও হবে অভাবনীয়। ইউক্রেনের কৃষি উপ-মন্ত্রী তারাস ভিসোটস্কি অবশ্য সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, আবাদযোগ্য ২৫ শতাংশ জমি রাশিয়ার দখলে যাওয়ার পরও খাদ্য নিরাপত্তার হুমকিতে নেই ইউক্রেন।